পীযুষ প্লাবনমঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল ২০২১, রাত ৩:৫ সময়01
পীযুষ প্লাবন: ১#মনে আছে সিরিয়ার সেই তিন বছরের ছেলেটির কথা? বোমায় ক্ষতবিক্ষত শরীর নিয়ে মরে যাওয়ার আগে যে বলেছিল আমি ঈশ্বরকে সব বলে দেব'। সে হয়তো ঈশ্বরকে সব বলে দিয়েছে, আমাদের পৈশাচিকতার কথা, আমাদের লোভ এর কথা, আমাদের অসভ্যতার কথা, আমাদের নির্যাতনের কথা। আমরা মানুষ মেরেছি হাজারে হাজার,আমরা একে অপরকে ধ্বংস করার জন্য মারণাস্ত্র বানিয়েছে লক্ষ-কোটি,মানুষে মানুষে বিভেদ বানানোর জন্য তৈরি করেছি নানান গোপন অস্ত্র ! সে হয়তো ঈশ্বরকে সব বলে দিয়েছে।বলেছে সেই পাখিটির কথা যে আর আকাশে উড়ে না,বলেছে সেই আকাশের কথা যে একদিন নীল ছিল ,বলেছে সেই বাতাসের কথা যে একদিন নির্মল ছিল, বলেছে সেই পৃথিবীর কথা যে একদিন সবার ছিল ।এই সবার পৃথিবীকে আমরা ভাগ করেছি ইচ্ছেমতো ধর্মের নামে, দেশের নামে, ভাষার নামে, মানুষকে দূরে সরিয়েছি চামড়ার রঙ দিয়ে গণতন্ত্রের নাম দিয়ে কেটে টুকরো করেছি আমাদের।সাগর পাড়ে পড়ে থাকা এলেন কুর্দি, কাঁটাতারে ঝুলতে থাকা ফেলানী হয়তো সব বলে দিয়েছে ঈশ্বরকে।ঈশ্বর তার পৃথিবী ফেরত চেয়েছেন,তিনি হয়তো শুনেছেন সব অভিযোগ, তিনি হয়তো শুনেছেন প্রকৃতির আর্তনাদ তিনি হয়তো শুনেছেন সেই পাখিটির কান্না।একদিন হয়তো সব ঠিক হবে কিন্তু আমরা কি সত্যি মানুষ হবো ? ২#মানুষ যা বদলাতে পারেনি প্রকৃতি তা করেছে, মানুষের অন্যায় আচরণ প্রকৃতি মায়ের মত অনেক সহ্য করেছে, আর কত? ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে যা হয় প্রকৃতি ও বোধহয় এবার তাই করেছে।মানুষ তার স্বার্থের জন্য ইচ্ছেমতো ব্যবহার করেছে বিধাতার সৃষ্টি জগতকে, অতি লোভী মানুষ নীল আকাশকে করেছে কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন, নদীর স্বচ্ছ জল কে করেছে কলুষিত, প্রকৃতির দান অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে বাড়িয়েছে কার্বন ডাই অক্সাইড ,জীবন বাঁচানোর চেয়ে ব্যয় করেছে বেশি টাকা জীবন মারার অস্ত্র বানিয়ে।অযোগ্য অথর্ব লোক টাকার ভেলকিবাজি দেখিয়ে হয়ে গেছে বিখ্যাতজন। প্রশাসন মিডিয়াএ সমস্ত অযোগ্য লোকেরাই কিনতে চায় ,কখনো কখনো সফল হয়ে ও যায় । রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির কারণে কখনো কখনো দেশদ্রোহীদের গাড়িতেও উরে জাতির পতাকা। আর কত ? মানুষের সৃষ্ট এই সমস্ত পাপ যখন সহ্যের সীমা লংঘন করে তখনই আবির্ভাব হয় করোনা,কলেরা সহ বিভিন্ন নামের মহামারীৱ,সৃষ্টিকর্তা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেন তুমি নিজেকে যত ক্ষমতাশালীই ভাবনা কেন তুমি মানুষ,আমার সৃষ্টি,সীমানা লঙ্ঘন করো না। নদীর জল নষ্ট করায় মানুষকে অভিশাপ দিয়েছে মাছ, নীল আকাশকে কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন করায় মানুষকে অভিশাপ দিয়েছে পাখি, পৃথিবীতে অক্সিজেনের চেয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাড়িয়ে দেয়াতে মানুষকে অভিশাপ দিয়েছে সমস্ত প্রাণীকুল,অথচ আমরা ইচ্ছে করলেই অভিশাপের পরিবর্তে সবার আশীর্বাদ পেতে পারতাম । ৩# কোথাও কি ভুল হচ্ছে? মনে হয় তাই। মানুষের জীবন মরণের প্রশ্নে রাজনীতি বুঝিনা,কোন রাজনীতি বুঝিনা,যদি মানুষ থাকে তবে দেশ থাকবে, যদি দেশ থাকে তবে সেই দেশে রাজনীতি থাকবে।নীতিহীন রাজনীতি যাই করুক আর না করুক দেশের জনগণের জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। অর্থ কখনো জীবনের বিনিময় হতে পারে না,রাজনীতির মারপ্যাঁচে যারা নীতিনির্ধারক তাদের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত দেশকে চরম বিপদের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সে কথা অকপটে স্বীকার করতেই হবে।হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত দেয়া হলো মার্কেট সব খুলে দেয়া হবে, কেন?হয়তোবা উত্তর হিসাবে বলা হবে ঈদের সময় তাই,যদি দেহের মধ্যে প্রাণ না থাকে তাহলে ঈদের আনন্দে আনন্দিত হবে কে?ওই লাশগুলো ?বিশ্বেৱ অনেক দেশই বুঝেছে করোনা ভাইরাসের ব্যাপকতা কত ভয়ংকর হতে পারে, আমরা দেখেছি আর নিরবে চোখের জল ফেলেছি,প্রতিদিন হাজার হাজার লাশ, মৃত্যুর মিছিল যেন।এখন কি আমরা নিজেরাই সেই লাশের মিছিল হওয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছি? এখনো সময় আছে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার,জনগণের জন্য যে রাষ্ট্র,জনগণের জন্য যে সরকার,আর সরকারের প্রধান যিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি দয়া করে কারো কারো অনাকাঙ্ক্ষিত উচ্চারণের মধ্য দিয়ে যে মৃত্যুর মিছিলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা দয়া করে তা বন্ধ করুন। সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন,আপনি মাদার অফ হিউম্যানিটি,আপনার একটি সিদ্ধান্তই বাঁচাতে পারে এদেশের মানুষকে। ঈদ প্রতিবার আসবে,বারবার আসবে কিন্তু জীবন একবারই ,একটাই জীবন।(চলবে)